প্রকাশ: শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৫:৩২ পিএম |
দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন হলো ‘সমতলের চায়ের রাজধানী’ খ্যাত উত্তরাঞ্চলের জিরো পয়েন্ট বলে পরিচিত তেতুঁদুলিয়ার পঞ্চগড়ে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়াম প্রঙ্গণে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন রংপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সুজন, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ চা বোর্ডে চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আমিরুল হক খোকন, জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ. হান্নান শেখ প্রমুখ।
এর পর নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে চায়ের নিলাম কেন্দ্র ঘিরে চা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ব্রোকার ও ওয়্যার হাউজ। ইতোমধ্যে ১০টি ব্রোকার হাউজের মধ্যে ৫টিকে এবং আটটি ওয়্যার হাউজের মধ্যে ২টিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপস তৈরিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ে ২০০০ সালে সমতল ভূমিতে ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু হয়েছিল। এখনকার সমতলের আবহাওয়া এবং মাটি দার্জিলিং জেলার পাশাপাশি হওয়ায় গত ২৩ বছরে আবাদ বেড়েছে কয়েকগুণ। এক সময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন ভরে উঠছে সবুজ চায়ের বাগানে। তবে, দীর্ঘদিনেও চা নিলাম কেন্দ্র চালু না হওয়ায় পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন ক্ষুদ্র চাষিরা। এ ছাড়াও এখানকার কারখানায় উৎপাদিত চা বিক্রির জন্য নিতে হতো চট্টগ্রাম আর সিলেটের শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে। এতে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ হতো। অবশেষে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে।
পঞ্চগড়ে চা বাগানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, নিলাম কেন্দ্রটি চালু হওয়াতে উৎপাদিত চা আর চট্টগ্রাম-সিলেটে পাঠানো লাগবে না। এতে খরচ কমে আসবে। নিলাম কেন্দ্রে উন্মুক্ত কেনাবেচায় কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। এতে সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।
পঞ্চগড়ে এখন ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে চায়ের আবাদ হচ্ছে। আটটি নিবন্ধিত ও ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগানের পাশাপাশি ৭ হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং ১ হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে উঠেছে। পঞ্চগড়ের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলাতেও চা চাষ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে ৩০টি বড় চা বাগান এবং আট হাজারের বেশি ক্ষুদ্রবাগান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়াও উৎপাদনে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ২০২২ মৌসুমে জেলার ২৫টি কারখানায় কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে,যা দেশের মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশ। এ শিল্পে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।