নগরীর চারটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিল বরিশাল সিটি করপোরেশন। কিন্তু ১১ মাসেও ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে যানবাহনের চাপের কারণে এলাকাবাসীকে সড়ক পারাপারে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। যানবাহনের বেপরোয়া গতি ও সড়কের বাঁকে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার রয়েছে নগরীর মধ্যে। এ কারণে নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে যানবাহন প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পার হতে বেশ সময় লেগে যায়। তিনটি সড়কের মোড় এবং বাস টার্মিনালের গাড়িও মহাসড়কের ওপর থাকায় বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উভয় প্রান্ত থেকেই এ যানজট লেগে থাকে। আর তা সামাল দিতে বেসামাল অবস্থা হয় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই স্থান অতিক্রমকালে দূর-দূরান্তের গাড়ি ছাড়াও নগরবাসীকেও ফেলে দুর্ভোগে।
চৌমাথা এলাকার বাসিন্দা রানা হোসেন বলেন, চারটি সড়কের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সারাক্ষণ ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন আটকা পড়ছে। এছাড়া এলাকায় রয়েছে একটি বাজারও। সেখানে মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দুই পাশের দুই সড়কের মুখেই গড়ে তোলা হয়েছে থি-্রহুইলার ও অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। এ কারণে সেখানে যানজট তীব্র হয়। তিনি বলেন, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে রেখেছে এ মোড়টিকে। যার ফলে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষকে ওই মোড় পার হতে কিছু সময় ব্যয় করতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেছে বৃদ্ধ এবং শিশুদের। দ্রুত মহাসড়ক পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
একই অভিযোগ কলেজ শিক্ষার্থী রায়হান রহমানের। তিনি বলেন, প্রতিদিন এই সড়ক থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ হলে এই ঝুঁকি অনেকটা কমতো। শুধু এই সড়কই নয়। সাগরদী ও আমতলার মোড় অতিক্রমকালে আবারও যানজটের সৃষ্টি হয়। তিনটি সড়কের মোড় হচ্ছে এটি। বিশেষ করে ওই মোড় অতিক্রম করে একদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল নৌ-বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের পথ। ফলে ওই স্থানেও যানজট নগরবাসীকে দুর্ভোগে ফেলেছে।
এই এলাকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, তিন সড়কের মোড় হওয়ায় এই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। অনেক সময় যানবাহনের চাপ সামলাতে পারে না ট্রাফিক পুলিশ। আমতলার মোড় অতিক্রম করার পরই আবারও বড় ধরনের জট বাধে রূপাতলী চার রাস্তা মোড়ে। ওই মোড়ের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড। সেখানেও সড়কের ওপর বাস রেখে যাত্রী উঠানামা এবং সেখান থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, কুয়াকাটা, পিরোজপুরসহ ১৬টি রুটের বাস চলাচল করে। এ কারণে ওই মোড়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ওই চারটি মোড়ে স্বাভাবিক দিনগুলোর যানজট নগরবাসী থেকে শুরু করে যারা যাতায়াত করেন তাদের কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণ গাড়িগুলো অপ্রশস্ত মহাসড়কে আসার সঙ্গে সঙ্গে গতি কমে যায়। তার মধ্যে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চারটি মোড়ে মহাসড়কের গাড়ি এবং অভ্যন্তরীণ গাড়িতে বড় ধরনের জট লেগেই থাকে। আর বিশেষ দিনগুলোতে এ জট আরও ভয়াবহ হয়।
সমাজকর্মী কাজী মিজানুর রহমান বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন সভা-সেমিনার এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই চার মোড়ে ওভারব্রিজ দেওয়ার জোর আবেদন জানানো হচ্ছে। কিন্তু সেই আবেদন সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছলেও তারা কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না।
এ বিষয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকা গড়িয়ার পাড় থেকে দপদপিয়া ব্রিজ পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ছয় লেন মহাসড়কও করা হবে। ইতোমধ্যে নগরীর মধ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহাম্মেদ জানান, চলতি বছরের মধ্যে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা এগোচ্ছি।