প্রকাশ: সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:২২ পিএম |
খুলনায় ব্রয়লার মুরগিতে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর চারটি ভারী ধাতু। খাবার থেকে মুরগির শরীরে ঢুকছে এই ধাতু। যা না জেনেই প্রতিনিয়ত খাচ্ছে অনেক মানুষ। অতিমাত্রার এসব ভারী ধাতু মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের গবেষণায় উঠে এসেছে এসব চিত্র। এ অবস্থায় অর্ধ সিদ্ধ মুরগির মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তাশরিফ আহমেদ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ‘এসেসমেন্ট অব হেভি মেটালস ইন ব্রয়লার চিকেন অ্যান্ড ইটস সোর্স ট্রাকিং ইন খুলনা সিটি করপোরেশন এরিয়া’ শিরোনামে সম্প্রতি একটি গবেষণা করে। ওই গবেষণার জন্য তিনি নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, রূপসা ঘাট, বয়রা বাজার, নিউমার্কেট কাঁচা বাজার ও নিরালা বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনে ল্যাবে নিয়ে যান। এরপর ল্যাবে ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড় নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণাটির উদ্ধৃতি দিয়ে তাশরিফ আহমেদ জানান, ভারী ধাতু নিকেলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রা প্রতি কেজিতে শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু মাংসে পাওয়া গেছে ১২৮ মিলিগ্রাম ও হাড়ে ৭৯ মিলিগ্রাম। ক্রোমিয়ামের অনুমোদিত মাত্রা ১ মিলিগ্রাম হলেও পাওয়া গেছে মাংসে ১২ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম ও হাড়ে ১০ দশমিক ৪৫ মিলিগ্রাম।
সীসার অনুমোদিত মাত্রা ০ দশমিক ১ মিলিগ্রাম হলেও মাংসে পাওয়া গেছে ১৮ দশমিক ৫২ মিলিগ্রাম ও হাড়ে ৩ দশমিক ৭২ মিলিগ্রাম। আর্সেনিকের অনুমোদিত মাত্রা ০ দশমিক ১ মিলিগ্রাম হলেও মাংসে পাওয়া গেছে ০ দশমিক ৪৩ মিলিগ্রাম ও হাড়ে ০ দশমিক ৩৭ মিলিগ্রাম।
ওই শিক্ষার্থী বড়বাজার ও অন্য কয়েকটি স্থান থেকে ১৫টি কোম্পানির পোল্ট্রি ফিড (মুরগির খাবার) সংগ্রহ করে তা ল্যাবে পরীক্ষা করেন। তাতে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে নিকেলের মাত্রা ১ দশমিক ৯৩ মিলিগ্রাম, ক্রোমিয়ামের মাত্রা ৬০ দশমিক ৫৮ মিলিগ্রাম এবং সীসার মাত্রা ৫ দশমিক ৮৬ মিলিগ্রাম। তাশরিফ আহমেদ জানান, পোল্ট্রি ফিডে সীসার অনুমোদিত মাত্রা ০ দশমিক ০৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু পাওয়া গেছে অনেক বেশি। নিকেল ও ক্রোমিয়ামের কোনো অনুমোদিত মাত্রা বের করেনি সংস্থাটি। আর তিনি আর্সেনিকের পরীক্ষাটি করতে পারেননি।
তিনি জানান, পরবর্তীতে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরায় ব্রয়লার মুরগি দিয়ে তৈরি করা খাবারে কি পরিমাণ ভারী ধাতু রয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ব্রয়লার মুরগি দিয়ে তৈরি স্যুপ, অন্থন, বার্গার, চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার বিক্রি করা হয়। অনেক মানুষ বাড়িতে এই মুরগি খান। ফলে তাদের শরীরে ভারী ধাতু প্রবেশের আশংকা রয়েছে। তিনি বলেন, মূলত ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে তৈরি পোল্ট্রি ফিড বা খাবার খাওয়ানোর ফলে মুরগিতে অতিমাত্রার ৪টি ধাতু ঢুকছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর তদারকি করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ব্রয়লার মুরগি অর্ধ সিদ্ধ করে কিছু খাবার তৈরি করা হয়। এগুলো খাওয়া মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ব্রয়লার মুরগি যদি ভালোভাবে সিদ্ধ, ফ্রাই অথবা রান্না করে খাওয়া হয় তাহলে ঝুঁকি থাকে না। সেজন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে অর্ধ সিদ্ধ মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।