২০২২ সালকে বিদায় ও ২০২৩ সালকে নববর্ষ হিসেবে স্বাগত জানাতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে জোরে-সোরে প্রস্তুতি চলছে। হোটেল-মোটেল এবং পর্যটন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো আলাদা আলাদা করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নববর্ষ বরণে বিভিন্ন হোটেলে থাকছে ইনডোর আয়োজন। তবে গেল কয়েক বছরের ন্যায় এবারও সমুদ্র সৈকতসহ আউটডোরে কোনো আয়োজন হচ্ছে না। এছাড়া, বছরের শেষ সূর্যাস্ত অবলোকন ও নতুন বছরকে বরণ করতে কক্সবাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে বহু পর্যটক। ইতোমধ্যে হোটেল বুকিং দিয়ে তারা তাদের আগমন নিশ্চিত করেছেন। তাই কয়েক লাখ পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, আউটডোরে বড় কোন অনুষ্ঠান না থাকলেও বিভিন্নভাবে বড় পরিসরে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন হবে কক্সবাজারে। শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় ও রাতে বিভিন্ন হোটেলের ইনডোরে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এবং বিশাল সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়ে ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩ সালকে বরণ করতে থাকছে নানা আয়োজন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লোনা জলে গা ভাসানো আর বালুকা বেলায় দাঁড়িয়ে নতুন বছরের নতুন সূর্যের রোদে আলোকিত হয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। সে বিষয়কে কেন্দ্র করে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসগুলো আলাদা করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নববর্ষের সাজ-সজ্জাসহ নানা ধরণের কারুকার্য করছে। ইতোমধ্যে অনেক হোটেলে তা সম্পন্নও করেছেন। অন্যান্যরাও কাজ করছেন।
স্বপ্নালয় স্টুডিও এ্যাপার্টম্যান্টের ইনচার্জ কুতুব উদ্দীন জানান, তাদের হোটেলে থার্টি ফাস্ট নাইটের জন্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম কক্ষ বুকিং হয়েছে। যা আশানুরূপ নয়। প্রত্যাশা ছিলো অন্তত ৮০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকি হয়েছে। অন্যান্য হোটেল-মোটেলেও খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য মিলেছে। তবে তারকা মানের হোটেলকে গুলোতে বরাবরের মতোই ফুল বুকিংয়ের প্রত্যাশা রয়েছে। সবকটি তারকা হোটেলে থার্টিফাস্ট নাইটের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম টিকিটও বিক্রি শুরু করেছে।
হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাভেদ চৌধুরী বলেন, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের হোটেল শতভাগ অগ্রিম বুকিং রয়েছে। থার্টিফাস্ট নাইট ও নববর্ষ বরণের নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। দুইজন তারকা শিল্পী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন। একইভাবে তারকামানের হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইস, কক্স টুডে, সায়মন বীচ ও লংবীচসহ আরো কিছু বড়মানের হোটেলেও নানা অনুষ্ঠান এবং জমকালো আয়োজন থাকবে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। একইভাবে জেলা প্রশাসন বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করেছেন। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে।
সরকারিভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবারও উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফাস্ট নাইটের কোন আয়োজন করা যাবে না। তাই কক্সবাজারেও কাউকে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়নি।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা দেলোয়ার হোসেন জানান, কক্সবাজারে সাড়ে ৪ শ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত্রিযাপন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল শুরু হলে সেখানেসহ হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেক জোনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। একইসাথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বীচকর্মী ও লাইভগার্ডের সাথে সমন্বয় করে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ সব সময় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, ‘কক্সবাজার শুধু দেশের নয় পৃথিবীর একটি আকর্ষণীয় পর্যটন জোন। তাই যে কোন বিশেষ দিন উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকের ভীড় থাকে। এবারও পর্যটকরা থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজার মুখী হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তাই পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবেন।