প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:০০ PM
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ প্রবাদটা পুরোপুরি প্রযোজ্য ২০২২ সালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। করোনার পর ইউক্রেন যুদ্ধ পাল্টে দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যের চিত্র। বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ট্রিলিয়নে নিতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশ একটা বেগ পেতে হয়নি। আর তাদের চাপে বদলে গেলে ব্যবসার গতিপথও। যুদ্ধের দামামায় অর্থ অর্জনে ছিল নানা কৌশলে। যে কৌশলে কুপোকাত সারাবিশ্ব আর বাজিমাত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের।
বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। আর সে লক্ষ্মী ‘অর্থ’। যে অর্থ পাল্টে দেয় সব কিছু, নিয়ে আসে সমৃদ্ধি। তবে মুদ্রার উল্টো পিঠের চিত্রটা পুরোপুরি সুখের বার্তা বহন করে না। একজনের উত্থানে আরেকজনের পতন কিংবা টেনে নিচে নামিয়ে উপরে ওঠার গল্পগুলো আড়ালে থেকে যায়। নানা ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অর্থনীতির দিক পাল্টায়, যাতে ব্যবসায়িক সুবিধা আর দাবার চালে ফুলে ফেঁপে ওঠে জায়ান্টরা।
করোনার পর বদলে গিয়েছিল পুরো পৃথিবী। মরার ওপর খাড়ার ঘা ইউক্রেন যুদ্ধ। যাকে পুঁজি করে নানা রাজনৈতিক চালে বেড়েছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থের ঝুঁড়ি। প্রযুক্তি, জ্বালানি, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের উত্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। চ্যালেঞ্জও ছিল বেশ। কাঁচামালের স্বল্পতা আর তা মিললেও গুনতে হয়েছে বড় অংকের অর্থ। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে পণ্যের দামের লাগাম টানা যায়নি। উৎপাদক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চড়া মূল্যে পণ্য বিক্রির সুবিধা বাজার থেকে পুরোপুরি হাসিল করে নিয়েছে।
করোনার পর থেকে ইলেকট্রনিক পণ্যের জয়জয়কার। পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে প্রযুক্তি নির্ভরতা বেড়েছে শতভাগ। এতেই শীর্ষে ছিল অ্যাপেল। মার্কিন মুল্লুকের এ প্রতিষ্ঠান ট্রিলিয়ন ডলারের ঘরে পা রাখে করোনার মাঝেই। আর বাকি দুই বছরে তা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। গ্রাহকদের আস্থার শতভাগ অর্জনে ছাড় না দেয়া স্টিভ জবসের স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠান এ বছরের শীর্ষ আয়কারী।
ইউক্রেন যুদ্ধে তাল হারিয়েছে বিশ্ব। যুদ্ধের চেয়ে বড় যুদ্ধ শুরু হয় জ্বালানি নিয়ে। আর তাতেই সৌদি আরামকোর আয়ের ঝুঁড়ি ফুলে ফেঁপে ওঠে। ওপেকভুক্ত শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাজার দখল যেন ছিল হাতের মোয়া। ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান একাই কলকাঠি নেড়েছে বিশ্ব অর্থনীতির। রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা যেন তুরুপের তাস হয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটির ওপর। প্রযুক্তি উৎপাদন ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সেবা প্রদানে কাজ করেছে নানাভাবে। দম ফেলার ফুরসত যেন তাদের ছিল না। মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট কিংবা অ্যামাজন এনেছে বৈচিত্র্য। সেবা নিশ্চিতে নানা ধরনের সফটওয়্যার উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর ই-কমার্সের জয়গানে প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লাবে। সঙ্গে যুক্ত মেটা ও এনভিডিয়া। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পৃথিবী শাসনের ভারটুকু যেন নিয়েছে এ দুটি প্রতিষ্ঠান।
ব্যবসার বিনিয়োগে প্রয়োজন অর্থ। যা দখলে ছিল ওয়ারেন বাফেটের। দ্য ওরাকল অব ওমাহা দর্শনে ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লাব যেন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়েরই। বিনিয়োগের পাশাপাশি ব্যাটারি প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নে বহুল চর্চিত ব্যক্তি ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান পথ দেখাচ্ছে নতুনের। আর প্রযুক্তিতে অবশ্যম্ভাবী সেমিকন্ডাক্টরের একচেটিয়া বাজার তো তাইওয়ানের হাতে। সব মিলিয়ে প্রযুক্তির দখলে বিশ্ব। প্রতিটি মানুষের জীবনকে সহজ করার প্রচেষ্টায় পকেট ভারী হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর জয়যাত্রা নাকি দখলের রাজনীতি? আয়ের খাতায় অর্থের অংক বড় হলেও ব্যয়ের খাতায় মানুষের জীবনটা একপ্রকার মিলিয়ে গেল।